কামরুল হাসান :
‘ছাত্র জীবন সুখের জীবন, যদি না থাকতো এক্জামিনেশন।’ শিশুকাল থেকেই এ প্রবাদটি শুনে আসছি। মনে হয় প্রিয় পাঠকগণও এটা শুনেছেন। হ্যাঁ, আজকের লেখার বিষয় পরীক্ষা নিয়েই। পরীক্ষারও আবার ভিন্নতা রয়েছে। আমি কিন্তু পাবলিক পরীক্ষার বিষয় নিয়েই ভাবছি। আপনারাও এ পরীক্ষায় বসেছেন। পূর্ববর্তীরাও বসেছেন। আমিও বসেছি। বর্তমানরাও বসছে। পরবর্তীরাও বসবেন। চলছে পাবলিক পরীক্ষার মওসুম। এ মওসুমে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা চলমান। কয়েক দিন পরেই শুরু হবে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। বলতে গেলে প্রায় বছর জুড়েই কোন না কোন পাবলিক পরীক্ষা চলছেই। এ সব পরীক্ষার গুরুত্ব অনেক। তাই এ পরীক্ষাগুলোতে ভালো ফলাফল করা চাই-ই চাই। ঠিক যেমন- ‘ডু অর ডাই’ বা ‘বাই হুক এন্ড ক্রুক’ অথবা ‘হার্ট এন্ড সোল’ নীতিতে হলেও। মেধাবল, অর্থবল, ক্ষমতাবল তথা শক্তিবলে হলেও সেটা চাই। এমন কি চৌর্যবৃত্তিতে হলেও! যারা এমন মনোবল পোষণ করেন, যে করেই হোক ফলাফল ভালো চাই-ই চাই। তাদেরকে শুধু অসংখ্য বারই নয়, বরং লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি বার ধন্যবাদ জানাই। কারন- ফলাফল ভালোর ব্যাপরে তারা তো অন্তত: এমন দৃঢ় মনোভাব পোষণ করেন। তবে যারা অন্য সব বল ছেড়ে শুধুমাত্র মেধাবলের পক্ষে আছেন, তাদের প্রতি আমার অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে শুধু মিলিয়ন বিলিয়নই নয়, বরং ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন বার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। কারন- এই তো কয়েক মাস আগে ‘মেধা! মেধা!! মেধা!!!’ বলে বিশ^কে সেই বার্তাই জানান দিয়েছেন। অবশ্যই আল্লাহ আপনাদের চাওয়ার দাম দিবেন-ই দিবেন। পাক্কা কথা- আপনাদের এ চাওয়া অপূর্ণ থাকবে না। যদি আপনারা মেধার চর্চা করেন। সহজ হিসেব মনে করে বা ‘জীবনের শেষ চিকিৎসা-ফজলু মিয়ার ফলের টনিক’ মনে করে তাই-ই করেন না একবার। তবে সেই সাথে বোনাস হিসেবে ফ্রি একটি দোয়া করছি- ‘হে রাব্বুল আল আমিন, আপনিও তাদের প্রতি দয়াশীল হোন। তাদেরকে অভিশপ্ত শয়তানের ধোকা থেকে রক্ষা করুন। তাদেরকে ধৈর্য্য ধরে সাধনা করার তৌফিক দিন। তাদের মনের মকসুদ পূরণ করে দিন। আমিন।’ অবশ্য দোয়ার সাথে কিন্তু দয়াও দরকার। এ কিন্তু, কিন্তু অন্য কিন্তু। মানে শর্ত। তবে আল্লাহ দোয়াকারীকে পছন্দ করেন, তা ছাড়া আমি একজন মোল্লা বংশের লোক, তাই আশা করি আল্লাহ এ দোয়া কবুল করবেন। যদি আল্লাহ আমার দোয়া কবুল না-ই করেন তবে এ নিয়ে কোন দু:শ্চিন্তা করবেন না। শর্তানুসারে আপনারা একটু বেশি বেশি দয়া করবেন। এ দয়া বইয়ের প্রতি, অন্যের প্রতি, মা-বাবা সন্তানের প্রতি, শিক্ষক শিক্ষার্থীর প্রতি আর সবাই সবার প্রতি। অর্থাৎ যার যার জায়গা থেকে সাধ্যমত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে যাবেন। শিক্ষার্থীরা বইয়ের প্রতি, সমাজ ও ধর্মের দৃষ্টিতে অন্যের প্রতি, মা-বাবা সঠিক দিক নির্দেশনা ও যোগান দিয়ে সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সন্তানের প্রতি, শিক্ষক সঠিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর প্রতি আর সবাই সহযোগিতার মাধ্যমে সবার প্রতি। এ মওসুমে চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার দক্ষিন জামালপুরের কয়েকটি কেন্দ্রের খোঁজ নিয়ে ভালোভাবেই বুঝেছি যে, এখনও ঠিকাদারদের ব্যবসা জম জমাট। তারা ভালো ফলাফল সরবরাহের ব্যবসা করেন। অর্থাৎ ভালো ফলাফল পাইয়ে দেয়ার ঠিকাদারী করেন। ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত গণিত বিষয়ের পরীক্ষার দিন প্রশাসন বিশেষ কারিশমা দেখিয়ে তাদের ক্ষমতার জানান দিয়েছেন। এতে শিক্ষানুরাগী ও সচেতন মহল অনেকটাই খুশি হয়েছেন। কিন্তু খুশি হতে পারেননি ঠিকাদাররা। কারন প্রশাসনের কারিশমায় তাদের ব্যবসা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাদের তৎপরতা কিন্তু থেমে নেই। তারা দু:সাহসিক এক পদ্ধতি অবলম্বন করে তাদের উদ্দেশ্য ঠিকই হাসিল করেছেন। তা নাহলে যে, তাদের কাছে আসা সেবা প্রত্যাশিরা মুখ ফিরিয়ে নেবেন। তারা যে একেবারে মাঠে মারা পড়বেন। ২৪ এপ্রিল একটি কেন্দ্রে (২১৩) সরেজমিনে দেখা যায়, এক পরীক্ষার্থী কাজল নামের এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টাকা দাবি ও নেয়ার অভিযোগ তুলে খোদ কেন্দ্র সচিবের নিকট। এ ছাড়া তাদের চাহিদা মোতাবেক (অতিরিক্ত) টাকা না দিলে পরীক্ষায় ফেল বা বহিষ্কারের হুমকির অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি ঠান্ডা মাথায় সূ² পরামর্শ দেন- এ ব্যাপারে কাউকে বিচার দিয়ে কোন লাভ নেই। কারন, দায়িত্ব প্রাপ্ত বড় কর্তা ব্যক্তিরা গোপনে তাদের রোল নম্বার টুকে নিয়ে এসফেল করবেন। কেউ জানবেও না। তাহলে তার ক্ষতি বিনা কোন লাভ হবে না। ভালো ফলাফলের জন্য সুযোগ-সুবিধা দেয়ার নামে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫’শ টাকা করে আদায় করেছে রেজিষ্ট্রেশনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান। সত্যতার জন্য মেহেদী হাসান নামের কর্মচারীকে খুঁজুন। যা ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি নামে প্রচার করছেন। অথচ পরীক্ষার ফরম পূরণের সময়ই ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি নেয়া হয়। এ বিষয়টা আর সহজ সরল মানুষ জানে না। বিশেষ করে যে সব প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন করার ক্ষমতা নেই তারা বাধ্য হয়েই অন্য প্রতিষ্ঠানের দ¦ারস্থ হয়। সে সব প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা অবধারিত