
প্রদীপ চন্দ্র মম
জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ লোকের বসবাস। সরকারী বেসরকারী অবকাঠামোগত কাজসহ ব্যক্তিমালিকানাধীন বিভিন্ন কাজকর্মে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ইটের চাহিদা। ক্রমবর্ধমান চাহিদার জোগান দিতে নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই প্রশাসনের ছত্র-ছায়ায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে নিত্যনতুন ইটভাটা। যার বেশির ভাগই ঘনবসতি কিংবা পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন কিংবা ২ ফসলি জমি নাহয় তিন ফসলি জমির ওপর। ইটভাটাগুলোতে ইট তৈরীর প্রধান কাঁচামাল বেলে দো-আঁশ মাটি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ইটভাটার প্রভাবশালী মালিকরা নামকাওয়াস্তে কৃষকদের বেশি টাকার প্রলোভন দেখিয়ে অথবা কখনো কখনো ভয়-ভীতি প্রর্দশন না হয় সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ভেকু মেশিনের সাহায্যে আবাদি জমির টপ সয়েল ( মাটির ওপরের অংশ) উত্তোলন করে ট্রাকে করে নিয়ে ইটভাটায় ব্যবহার করছে। ফলে জমিগুলো উর্বরতাশক্তি হারিয়ে ফেলছে। এতে করে অদূর-ভবিষ্যতে দেশে খাদ্য সংকটের আশঙ্কাসহ পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা। অথচ আবাদি জমি থেকে টপ সয়েল উত্তোলন করে নেওয়ার পরও কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ে চোখে পড়ে না কোন তৎপরতা। এ নিয়ে সাধারণ জনগণের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে বলা আছে, আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন; কোন ব্যক্তি ইট প্রস্তুতের উদ্দেশ্যে কৃষি জমি বা পাহাড় বা টিলা হতে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। অথচ উপজেলার ইটভাটাগুলোতে ফসলি জমির টপ সয়েল দিয়ে প্রতিনিয়ত প্রস্তুত করা হচ্ছে ইট। প্রতিটি ভাটায় মজুত রাখা হয়েছে প্রচুর পরিমাণ মাটি। ফসলি জমির টপ সয়েল সংগ্রহে রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে ইটভাটা মালিকদের মধ্যে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি ইউনিয়নে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার জন্য কৃষি উপ-সহকারীদের কৃষকদের নানা তথ্য-পরামর্শ দেওয়ার কথা থাকলেও কালেভদ্রে চোখে পড়ে না তাদের। ইটভাটা মালিকরা কৃষি কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং পু্লিশ-প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কৃষিবিদরা বলছেন, একবার আবাদি জমির টপ সয়েল সরিয়ে নিলে সে মাটির পুষ্টিগুণ ফিরে পেতে ১০-১২ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। ফলে আগামী ১০-১৫ বছর এরূপ চলতে থাকলে কৃষির আবাদি জমিগুলো অনাবাদি হয়ে পড়বে। এমনিতেই নিত্যনতুন বসতবাড়ি স্থাপনের ফলে কমে যাচ্ছে আবাদি জমির পরিমাণ।
সরিষাবাড়ীতে বর্তমানে নামে-বেনামে বৈধ ও অবৈধভাবে ৩১টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। ইটভাটা মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রকৃতপক্ষে সরিষাবাড়ীতে আইন মেনে ইটভাটাগুলো পরিচালিত হচ্ছে না। বৈধ লাইসেন্স, কৃষি বিভাগ, ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই অনেক ইটভাটা মালিকরাই নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে বৈধতার আড়ালে অবৈধ এই ইটভাটার ব্যবসা। এতে ভাটা মালিকদের পাশাপাশি, অসৎ কতিপয় প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অল্প দিনেই আঙ্গু্ল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে এখনই ভাব্বার সময় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইটভাটার অবৈধ আগ্রাসনে উপজেলার কৃষি জমির ওপর কি ধরণের প্রভাব পড়েছে কিংবা কত পরিমাণ আবাদি জমি ইটভাটার দখলে চলে গেছে তার কোন সঠিক হিসেবে দিতে পারেনি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
এ ব্যাপারে প্রভাবশালী উপজেলা বিএনপি ও ইটভাটা মালিক সমিতির নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন- সরকারের মৌখিক অনুমোদন নিয়েই এই ইটভাটাগুলোতে ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ইটভাটা নিয়ে কোন রিপোর্ট না করার জন্য পরামর্শ দেন।